নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে ১৮ বছর ধরে আওয়ামী লীগের উপজেলা কমিটির কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে আসা প্রবীণ নেতা গোলাম রাব্বানী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে (হাতপাখা প্রতীক) যোগ দিয়েছেন। তার এ দলবদল এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে চলছে তীব্র বিতর্ক ও সমালোচনা।
সম্প্রতি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার জয়াগ রশিদিয়া আলিম মাদরাসার মিলনায়তনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নোয়াখালী-১ (চাটখিল-সোনাইমুড়ী) আসনে প্রার্থী বাছাইয়ের লক্ষ্যে মতামত গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানে গোলাম রাব্বানী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে যোগদান করেন।
সেসময় তিনি ইসলামী আন্দোলনে যোগদানের বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, আমি দীর্ঘদিন যাচাই বাছাই করে এবং সংগঠন সম্পর্কে পড়াশোনা করে নিশ্চিত হয়েছি যে বাংলাদেশের যতগুলো দল আছে তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং আদর্শবান সংগঠন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। তাই আমি আমার সপরিবারে একমত হয়েছি ইসলামী আন্দোলন যোগদান করার জন্য।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা আহমদ আব্দুল কাইয়ূম। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, কেন্দ্রীয় যুবনেতা আবদুজ্জাহের আরিফী ও নোয়াখালী উত্তর জেলা সেক্রেটারি মাওলানা কামাল উদ্দিন। অনুষ্ঠানে নোয়াখালী-১ আসনে প্রার্থী চূড়ান্তে তৃণমূল নেতাকর্মীদের লিখিত মতামত গ্রহণ করা হয়।
জানা গেছে, গোলাম রাব্বানী আওয়ামী লীগের একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে দলীয় কার্যক্রমে সক্রিয় ছিলেন। তিনি সোনাইমুড়ী পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা হলেও দীর্ঘ সময় আওয়ামী লীগের পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে তার সরব উপস্থিতি ছিল দৃশ্যমান। তবে শেখ হাসিনার পতনের পর তার এ দলবদল এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। গোলাম রাব্বানীর এই দলবদলকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ অঙ্গনেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে এটিকে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখলেও, কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন তার রাজনৈতিক আদর্শ নিয়ে। স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যে মানুষ এত বছর আওয়ামী লীগের সব সুবিধা ভোগ করেছে, এখন ভোটের আগে এসে হাতপাখার আশ্রয় নিলো— এটা বিশ্বাসঘাতকতা।
অপরদিকে, ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। অনেকেই তার আচমকা দলবদলকে ‘চমকপ্রদ’ ও ‘কৌশলগত’ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
এ বিষয়ে গোলাম রাব্বানী বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিলাম। কোনো সময় দল থেকে সুবিধা নেইনি। বরং দলের জন্য কাজ করেছি। কিন্তু আমার সব সময় মনে হতো যেকোনো একটি ইসলামি দলে যুক্ত হই। অনেক চিন্তাভাবনা করে তাই ইসলামি আন্দোলনের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে নতুন করে রাজনীতির পথ বেছে নিয়েছি।
ইসলামী আন্দোলন সোনাইমুড়ী থানা সভাপতি হাফেজ ইসমাইল হোসাইন মিয়াজী বলেন, গোলাম রাব্বানী ভাইয়ের প্রতি আমাদের দীর্ঘদিনের মেহনত ছিল। তিনি খুব আন্তরিক মানুষ। আল্লাহ তায়ালা চেয়েছেন বলেই তিনি ইসলামি আন্দোলনের ছায়াতলে এসেছেন।