২০২৩ সালের ১৪ মে ইসরাইল অবৈধভাবে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর পূর্ণ করে। ২০২৮ সালে দেশটির প্রতিষ্ঠার ৮০ বছর পূর্ণ হবে। কিন্তু ইসরাইল কি শেষ পর্যন্ত অভিশপ্ত ৮০ বছর পূর্ণ করতে পারবে? এমন সংশয় প্রকাশ করেন খোদ ইসরাইলের সাবেক প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ। গত বছর দ্য জেরুজালেম পোস্টে দেয়া সাক্ষাতকারে এমনই জানান তিনি।
অনেক বিশেষজ্ঞও মনে করেন, গাজা যুদ্ধ ইসরাইলের শেষের শুরু। কিন্তু কেন এমনটা মনে করা হয়? ইহুদিদের ধর্মগুরু, তাদের ভাষায় রাব্বিদের ভবিষ্যবাণী অনুযায়ী অষ্টম দশকের অভিশাপ হিসেবে দেখা হয়। তারা মনে করেন, কোন ইহুদি রাষ্ট্রের আয়ু ৮০ বছরের বেশি হয় না। তাদের পতন হবে বাইরের আক্রমণে নয় বরং ভেতরের বিভাজন ও গৃহবিবাদের মাধ্যমে।
ইতিহাসও একই সাক্ষ্য দেয়। বিগত প্রায় ২ হাজার বছরে ইহুদিরা যেসব সার্বভৌম রাষ্ট্র গড়েছে যেমন নবী দাউদ (আ.) এর রাজত্ব কিংবা হাসমানিয়া রাজ্য-একটিও ৮০ থেকে ১০০ বছরের বেশি স্থায়ী হয়নি।
পবিত্র কোরআনেও বনি ইসরাইলদের ধ্বংসের কথা বলা হয়েছে। তাদের অতীতের পাপ, নবীদের হত্যা, ফিতনা ও ফাসাদের জন্য আল্লাহ তাআলা তাদের উপর কঠিন শাস্তি দিয়েছেন। বনি ইসরাইলের আয়াতসমূহে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, বনি ইসরাইল পৃথিবীতে দুবার ফ্যাসাদ সৃষ্টি করবে।
কোরআনে আল্লাহ বলেন,
وَقَضَیۡنَاۤ اِلٰی بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ فِی الۡکِتٰبِ لَتُفۡسِدُنَّ فِی الۡاَرۡضِ مَرَّتَیۡنِ وَلَتَعۡلُنَّ عُلُوًّا کَبِیۡرًا
فَاِذَا جَآءَ وَعۡدُۨ اُوۡلٰىہُمَا بَعَثۡنَا عَلَیۡکُمۡ عِبَادًا لَّنَاۤ اُولِیۡ بَأۡسٍ شَدِیۡدٍ فَجَاسُوۡا خِلٰلَ الدِّیَارِ ؕ وَکَانَ وَعۡدًا مَّفۡعُوۡلًا আমি বনী ইসরাঈলকে কিতাবে জানিয়ে দিয়েছিলাম, তারা পৃথিবীতে দুইবার ফাসাদ সৃষ্টি করবে এবং কঠোর ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করবে। অতঃপর যখন প্রথম ফাসাদের সময় এলো, তখন আমি তোমাদের বিরুদ্ধে আমার কিছু কঠোর সৈন্য পাঠালাম, যারা ঘরে ঘরে ঢুকে পড়ল এবং তা ছিল অবধারিত শাস্তি। (সুরা বনি ইসরাঈল ৪–৫)
ইহুদিদের ধ্বংস, লাঞ্ছনা, শাস্তি এবং আল্লাহর অভিসম্পাত সম্পর্কে কোরআনে বহু স্থানে আলোচনা করা হয়েছে। তারা যখন বারবার আল্লাহর আদেশ অমান্য করেছে, নবীদের হত্যা করেছে, অহংকারে লিপ্ত হয়েছে, তখন আল্লাহ তাদের উপর কঠিন শাস্তি দিয়েছেন।
ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ كَانُوا يَكْفُرُونَ بِآيَاتِ ٱللَّهِ وَيَقْتُلُونَ ٱلنَّبِيِّۧنَ بِغَيْرِ ٱلْحَقِّ ۗ ذَٰلِكَ بِمَا عَصَوا۟ وَّكَانُوا۟ يَعْتَدُونَ
অর্থ: এটা তাদের সেই অপরাধের ফল, যে তারা আল্লাহর আয়াত অস্বীকার করত এবং নবীদের অন্যায়ভাবে হত্যা করত। তারা ছিল অবাধ্য ও সীমালঙ্ঘনকারী। (সুরা বাকারা: ৬১) তাদের পাপের ফলেই আল্লাহ তাদের উপর গজব ও ধ্বংস নামিয়ে আনেন।
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكَ لَيَبْعَثَنَّ عَلَيْهِمْ إِلَىٰ يَوْمِ ٱلْقِيَٰمَةِ مَن يَسُومُهُمْ سُوٓءَ ٱلْعَذَابِ ۗ
অর্থ: আর (স্মরণ করো) যখন তোমার প্রতিপালক ঘোষণা দিলেন, তিনি কিয়ামত পর্যন্ত তাদের উপর এমন লোক পাঠাতে থাকবেন, যারা তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেবে। (আল-আরাফ: ১৬৭) ইহুদিদের উপর কিয়ামত পর্যন্ত অন্য জাতির দ্বারা অবিরাম শাস্তি অব্যাহত থাকবে।
قُلْ هَلْ أُنَبِّئُكُم بِشَرٍّ مِّن ذَٰلِكَ مَثُوبَةً عِندَ ٱللَّهِ ۚ مَن لَّعَنَهُ ٱللَّهُ وَغَضِبَ عَلَيْهِ وَجَعَلَ مِنْهُمُ ٱلْقِرَدَةَ وَٱلْخَنَازِيرَ وَعَبَدَ ٱلطَّـٰغُوتَ অর্থ: বল, আমি কি তোমাদেরকে জানাবো তাদের চেয়েও নিকৃষ্ট জাতির কথা? যাদের উপর আল্লাহ লানত করেছেন, রুষ্ট হয়েছেন এবং তাদের অনেককে বানিয়ে দিয়েছেন বানর ও শুকর, এবং যারা তাগুতের উপাসনা করেছে। (মায়িদা: ৬০) এই আয়াতে ইহুদিদের মধ্যে একদলকে বানর ও শুকরে রূপান্তরের কথা বলা হয়েছে, এটি তাদের চূড়ান্ত অপমান ও শাস্তির দৃষ্টান্ত।
ইতিহাসবিদরা মনে করেন, প্রথম বিপর্যয় ৭২২ খ্রিস্টাব্দে ঘটে গেছে। যখন নব্য অ্যসিরিয়ান সাম্রাজ্যের রাজারা বনি ইসরাইলকে আক্রমণ করে জেরুজালেম দখল করেন। এটিই ছিল ইহুদি সাম্রাজ্যের পতনের সূচনা।
ইসলামি গবেষকদের মতে, দ্বিতীয় বিপর্যয় এখনো ঘটেনি। তবে বর্তমানে বিশ্বজুড়ে অস্থিরতা, মুসলিম নিপীড়ন, এবং ইসরাইলের আগ্রাস সেই বার্তা দিচ্ছে কিনা তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
ইসরাইল রাষ্ট্রের জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৪ মে। ২০২৮ সালে ৮০ বছর পূরণ হবে। তার মানে হাতে আছে মাত্র চার বছর। তালমুদের ভবিষ্যতের সত্য হলে আর তিন-চার বছরের মধ্যে ইসরাইল রাষ্ট্র ভেঙে যাওয়ার কথা। ইসরাইলে বর্তমানে সামাজিক, রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। গাজা, ইরানসহ বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে। তাহলে কি ধ্বংসের পথেই হাটছে ইসরাইল?
নবীজি বলেন, কিয়ামত তখন পর্যন্ত আসবে না, যতক্ষণ না মুসলমানরা ইহুদিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। মুসলমানরা তাদের হত্যা করবে। এমনকি ইহুদি যদি গাছ অথবা পাথরের আড়ালে লুকায়, তখন সেই গাছ বা পাথর বলবে: ‘হে মুসলমান! হে আল্লাহর বান্দা! আমার পেছনে একজন ইহুদি আছে, তাকে হত্যা কর।’ শুধু গারকদ গাছ (غرقد) এটি বলবে না, কারণ এটি ইহুদিদের গাছ। (মুসলিম: ২৯২২)
কোরআন ও হাদিসে ইহুদিদের ধ্বংস, লাঞ্ছনা, শাস্তি ও অভিশাপ বারবার উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের পাপ, নবী হত্যার ইতিহাস, অহংকার ও ধর্মীয় কপটতার কারণে। ইসলামি স্কলাররা এই আয়াত ও হাদিসগুলোকে বর্তমান সময়ের ইসরাইল রাষ্ট্রের আচরণ ও ভবিষ্যতের সাথে তুলনা করে দেখেন।