মিথ্যা হলফনামা দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য হন। দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে তিনি সম্পদের তথ্য গোপন করেন।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ অনুযায়ী নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে তিনি অযোগ্য ছিলেন। তার সংসদ সদস্য পদ ছিল অবৈধ, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার নিয়োগ ছিল অবৈধ এবং একই কারণে ২০০৯ সালে তার নেতৃত্বে গঠিত সরকারটিও ছিল অবৈধ।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ব্যাপক তদন্তে চাঞ্চল্যকর এ তথ্য উদ্ঘাটিত হয়েছে। তদন্তে বের হয়, শেখ হাসিনা স্থাবর সম্পদ হিসেবে ২১ দশমিক ৯১ একর জমির তথ্য গোপন করেছেন। দুই কোটি ১৬ লাখ ৫৪ হাজার ৯৭৬ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ লুকিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি এক কোটি ৯৩ লাখ ২০ হাজার টাকা দামের আমদানি করা মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ির তথ্যও গোপন করেছেন। বেনামে গাড়িটি ক্রয়ে তিনি জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে আইন লঙ্ঘন করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. মাসুদুর রহমান বিষয়টি তদন্ত করেছেন। তদন্ত শেষে সুপারিশে দুদক আইনের দুটি ধারায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে বলা হয়। ২০০৮-পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনা আর কোনো অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন কি না, তা নতুন করে তদন্ত করার সুপারিশ করা হয়।
বেনামে শুল্কমুক্ত গাড়ি কেনার কেলেঙ্কারির জন্য সংশ্লিষ্ট আইনে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০০৮ সালের নির্বাচনি হলফনামায় তথ্য গোপন করার বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠি পৌঁছে গেছে। নির্বাচন কমিশন তা পর্যালোচনা শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
দুদকের আরেকটি সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালের নির্বাচনি হলফনামা ছাড়াও ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের হলফনামায় দেওয়া শেখ হাসিনার সম্পদ বিবরণী তদন্তেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
দুদকের তদন্তে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার মিথ্যা হলফনামার বিষয়টি তৎকালীন সিইসি ড. শামসুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন অবহিত হওয়া সত্ত্বেও চেপে যায়। তৎকালীন দুদক চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) হাসান মশহুদ চৌধুরীও এ ঘটনা জানতেন। দুদকে ফাইলটি তখন ধামাচাপা দেওয়া হয় (ক্লোজ করা হয়)। এ বিষয়ে হাসান মশহুদ চৌধুরীর বক্তব্য জানার জন্য ফোনে যোগাযোগ করে জানা যায়, তিনি পারকিনসনস রোগে আক্রান্ত। কাউকে চেনেন না এবং কথা বলতেও অসুবিধা হয়।
শেখ হাসিনার মিথ্যা হলফনামা, সম্পদ বিবরণীতে তথ্য গোপন ও জালিয়াতিপূর্ণ কর্মকাণ্ডের যাবতীয় কাগজপত্র পেয়েছি । সাধারণ নির্বাচনে প্রার্থিতার পূর্বশর্ত হলো হলফনামার মাধ্যমে দাখিল করা সম্পদ বিবরণী। এতে পরিসম্পদ ও দায়Ñউভয়ই যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ হতে হয়। নির্বাচন আইন বা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ অনুযায়ী সংগত কারণেই হলফনামায় মিথ্যাচারে প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য শেখ হাসিনা ওয়াজেদ ১৯ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনে হলফনামার মাধ্যমে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। তাতে স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে নিজ নামে এবং যৌথ মালিকানার অংশ হিসেবে তার অর্জিত জমির পরিমাণ দেখান ৬ দশমিক ৫০ একর। তদন্তে শেখ হাসিনার স্থাবর সম্পদ পাওয়া যায় ২৮ দশমিক ৪১ একর জমি। অর্থাৎ দাখিল করা হলফনামায় নিজ নামে অর্জিত ২১ দশমিক ৯১ একর স্থাবর সম্পত্তি তিনি গোপন করেন। ২০০৭ সালের ৩০ জুন সময়কালে আয়কর নথিতে দেখানো রিটার্ন অনুযায়ী স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের মূল্য দেখান তিন কোটি ৩৫ লাখ ২১ হাজার ১৮৮ টাকা। কিন্তু তদন্তে তার পাঁচ কোটি ৫১ লাখ ৭৬ হাজার ১৬৪ টাকার সম্পদ পাওয়া গেছে। শেখ হাসিনা দুই কোটি ১৬ লাখ ৫৪ হাজার ৯৭৬ টাকার তথ্য গোপন করেন।